অর্থ সংকটে সরকার, সার-বিদ্যুতের দেনা মেটাতে বন্ড ছাড়ছে
টাকার সংকটে পড়া সরকার সার ও বিদ্যুৎ খাতের দেনা মেটাতে বাজারে বন্ড ছাড়ছে ।
এই বন্ড কিনবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো । বিপরীতে সুদ পাবে তারা ।
বন্ড হলো একধরনের আর্থিক পণ্য, যা বিক্রি করে সরকার ও বেসরকারি খাত দীর্ঘমেয়াদে ঋণ নিতে পারে । রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় সার ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির টাকা পরিশোধ করতে পারছে না সরকার ।
তাই এবার বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় বন্ড ছাড়া হবে সারের পাওনা পরিশোধ বাবদ ।
এ জন্য অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ কয়েক দিন থেকেই কাজ করছে । আর বিদ্যুতের বন্ড ছাড়া হবে পরের দফায় ।
সেটা হতে পারে ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে । সরকারি হিসাবে সার ও বিদ্যুতে বেসরকারি খাত ও সরকারি সংস্থার পাওনা প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা ।
এর মধ্যে বিদ্যুতের ভর্তুকি ১৪ হাজার কোটি টাকা বকেয়া । সারে বকেয়া ১২ হাজার কোটি টাকা ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলো কে বলেন, আমদানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি ততটা ভালো নয় । তাই রাজস্ব আদায় কম ।
এ কারণে নগদ টাকায় ভর্তুকির দায় পরিশোধের বদলে বন্ড ছাড়তে হচ্ছে । কত বছর মেয়াদি বন্ড ছাড়া হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি ।
দেশে মার্কিন ডলারের সংকটের কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে । এতে আমদানি খাতে রাজস্ব আদায় কমেছে ।
স্থানীয় উৎস থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) আদায়েও গতি কম । সব মিলিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ১৬ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা ।
এ সময়ে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা । আর্থিক সংকটে থাকা সরকারকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া শুরু করেছিল ।
তবে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সে পথ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরে এসেছে । এখন সরকার হাঁটছে বন্ড ছাড়ার পথে ।
অর্থ বিভাগ আজ বুধবার বা আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এ বিশেষ বন্ড ছেড়ে সার ও বিদ্যুৎ খাতে দায় মেটানোর প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে । যদিও তা কার্যকর হতে আরও দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে ।
আমদানিকারক ও উৎপাদকের কাছ থেকে যে দামে সার কেনা হয়, তার চেয়ে অনেক কম দামে বেচা হয় বাজারে । বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও তাই ।
মাঝখানের পার্থক্যটুকু ভর্তুকি দেয় সরকার । কয়েক মাস ধরে সার ও বিদ্যুৎ খাতে সরকার পাওনা পরিশোধ করতে পারছিল না ।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে । ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা ও সারে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে ।
সারে ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ার কারণ বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নও বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে খরচ বেড়েছে । পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ভাড়া (ক্যাপাসিটি পেমেন্ট) দেওয়ার কারণে এ খাতে সরকারের বিপুল ব্যয় করতে হচ্ছে ।
সূত্র জানায়, বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গত মাসে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে পাওনার তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ । তাদের চিঠি পাওয়ার পর বিভাগটি গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাওনা হিসাব করেছে ২৬ হাজার কোটি টাকা ।
জানা গেছে, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর তা বিক্রি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে । এ উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয় ।
ঋণপত্র (এলসি) খোলা ও ঋণের কারণে তারা ব্যাংকের কাছে দেনাদার থাকে । এদিকে বিপিডিবি যে দামে কেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনে, তার চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করে বাজারে ।
তবে কেনা দাম ও বাজার দামের পার্থক্য ভর্তুকি আকারে দেয় অর্থ বিভাগ । অর্থ বিভাগ এ টাকা দিচ্ছিল না বলে কেন্দ্রগুলো ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারছিল না ।
ফলে তাদের অনেকেই ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছিল । টাকা দিতে না পারায় এখন অর্থ বিভাগ ব্যাংকগুলোকে সরাসরি বন্ড দিয়ে দিচ্ছে ।
ব্যাংকঋণের সমপরিমাণ অর্থের বন্ডই ছাড়বে অর্থ বিভাগ । সারের ক্ষেত্রেও একই ভাবে বন্ড পাচ্ছে ব্যাংকগুলো ।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) নভেম্বরের শেষ দিকে নিরবচ্ছিন্ন সার আমদানির ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের সহযোগিতা চায় । ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিমকে এক চিঠিতে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান জানান, সার আমদানির ৩ হাজার ১৬৭ কোটি টাকার ঋণ হয়ে খেলাপি হয়ে গেছে এবং নতুন এলসি খোলায় জটিলতা হচ্ছে ।
গত জুন পর্যন্ত শুধু ইউরিয়া সারের ভর্তুকিই সরকারের কাছে পাওনা ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা । ভর্তুকির টাকা না পেলে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করা যাবে না ।
তারল্য–সংকটে অগ্রণী ব্যাংক এরই মধ্যে এলসি খুলতে অপারগতা প্রকাশ করেছে । আরও বলা হয়, সৌদি আরব থেকে সার আমদানির মূল্য যথাসময়ে পরিশোধ করা হয়নি ।
এ কারণে সৌদি আরবের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অসন্তোষ প্রকাশ করেছে । দেশটির একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে গেছে ।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, ব্যাংকগুলো সরকারের বিশেষ বন্ডকে এসএলআর হিসেবে দেখাতে পারবে । ব্যাংকগুলোকে এসএলআর বাবদ যে অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হয়, এ বন্ডের অংশটুকু আর রাখতে হবে না ।
ফলে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বাড়বে । তবে সোনালী ব্যাংকের মতো ব্যাংক এ সুবিধা নিতে পারবে না ।
কারণ, ব্যাংকটির এসএলআর বাবদ যে অর্থ রাখা দরকার, বর্তমানে তার চেয়ে বেশি টাকার বন্ড কেনা আছে । সোনালী ব্যাংকের এমডি মো. আফজাল করিম প্রথম আলো কে বলেন, ‘বন্ডের সুদের হার নিয়ে আলাপ চলছে ।
আমরা আশা করছি তা বাজার দরেই থাকবে । ’ সরকার বন্ডের পথে গেল কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা বলতে পারব না ।
তবে এটাও একটা বিকল্প, বিশ্বজুড়েই যার চর্চা রয়েছে । ’ বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ) ।
সংগঠনটির সদস্য এখন ৬২ । বিদ্যুতের মূল্য বাবদ সরকারের কাছে তাদের পাওনার বিপরীতে ব্যাংকগুলোর কাছে আবার তাদের দেনা আছে ।
যতটুকু দেনা আছে, তার বিপরীতে ছাড়া হবে বন্ড । বিআইপিপিএর সাধারণ সম্পাদক ইমরান করিম গতকাল প্রথম আলো কে বলেন, ‘আমরা পাওনা পাব না ।
তবে আমাদের দেনা শোধের একটা ব্যবস্থা হচ্ছে । নির্বাচনের আগে প্রজ্ঞাপন হলেও অনেক কাজ বাকি আছে ।
প্রতিটি ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হবে । ’ বর্তমান সরকারের আগের এক আমলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) দায়ের বিপরীতেও ব্যাংকের অনুকূলে বন্ড ছেড়েছিল অর্থ বিভাগ ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলো কে বলেন, যেটা হচ্ছে, তা হলো টাকা না ছাপিয়ে বন্ড ছাড়া হচ্ছে । তা–ও মন্দের ভালো ।
ব্যাংকগুলো আর পাওনা টাকা চাইবে না, বন্ডের বিপরীতে বরং তাদের কিছুটা আয় হবে । তবে এ উদ্যোগে ঠিকই সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ বাড়বে ।
তিনি বলেন, সংকটে না থাকলে সরকার এ পথে যেত না ।
এই বন্ড কিনবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো । বিপরীতে সুদ পাবে তারা ।
বন্ড হলো একধরনের আর্থিক পণ্য, যা বিক্রি করে সরকার ও বেসরকারি খাত দীর্ঘমেয়াদে ঋণ নিতে পারে । রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় সার ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির টাকা পরিশোধ করতে পারছে না সরকার ।
তাই এবার বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় বন্ড ছাড়া হবে সারের পাওনা পরিশোধ বাবদ ।
এ জন্য অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ কয়েক দিন থেকেই কাজ করছে । আর বিদ্যুতের বন্ড ছাড়া হবে পরের দফায় ।
সেটা হতে পারে ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে । সরকারি হিসাবে সার ও বিদ্যুতে বেসরকারি খাত ও সরকারি সংস্থার পাওনা প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা ।
এর মধ্যে বিদ্যুতের ভর্তুকি ১৪ হাজার কোটি টাকা বকেয়া । সারে বকেয়া ১২ হাজার কোটি টাকা ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলো কে বলেন, আমদানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি ততটা ভালো নয় । তাই রাজস্ব আদায় কম ।
এ কারণে নগদ টাকায় ভর্তুকির দায় পরিশোধের বদলে বন্ড ছাড়তে হচ্ছে । কত বছর মেয়াদি বন্ড ছাড়া হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি ।
দেশে মার্কিন ডলারের সংকটের কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে । এতে আমদানি খাতে রাজস্ব আদায় কমেছে ।
স্থানীয় উৎস থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) আদায়েও গতি কম । সব মিলিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ১৬ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা ।
এ সময়ে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা । আর্থিক সংকটে থাকা সরকারকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া শুরু করেছিল ।
তবে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সে পথ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরে এসেছে । এখন সরকার হাঁটছে বন্ড ছাড়ার পথে ।
অর্থ বিভাগ আজ বুধবার বা আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এ বিশেষ বন্ড ছেড়ে সার ও বিদ্যুৎ খাতে দায় মেটানোর প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে । যদিও তা কার্যকর হতে আরও দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে ।
আমদানিকারক ও উৎপাদকের কাছ থেকে যে দামে সার কেনা হয়, তার চেয়ে অনেক কম দামে বেচা হয় বাজারে । বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও তাই ।
মাঝখানের পার্থক্যটুকু ভর্তুকি দেয় সরকার । কয়েক মাস ধরে সার ও বিদ্যুৎ খাতে সরকার পাওনা পরিশোধ করতে পারছিল না ।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে । ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা ও সারে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে ।
সারে ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ার কারণ বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নও বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে খরচ বেড়েছে । পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ভাড়া (ক্যাপাসিটি পেমেন্ট) দেওয়ার কারণে এ খাতে সরকারের বিপুল ব্যয় করতে হচ্ছে ।
সূত্র জানায়, বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গত মাসে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে পাওনার তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ । তাদের চিঠি পাওয়ার পর বিভাগটি গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাওনা হিসাব করেছে ২৬ হাজার কোটি টাকা ।
জানা গেছে, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর তা বিক্রি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে । এ উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয় ।
ঋণপত্র (এলসি) খোলা ও ঋণের কারণে তারা ব্যাংকের কাছে দেনাদার থাকে । এদিকে বিপিডিবি যে দামে কেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনে, তার চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করে বাজারে ।
তবে কেনা দাম ও বাজার দামের পার্থক্য ভর্তুকি আকারে দেয় অর্থ বিভাগ । অর্থ বিভাগ এ টাকা দিচ্ছিল না বলে কেন্দ্রগুলো ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারছিল না ।
ফলে তাদের অনেকেই ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছিল । টাকা দিতে না পারায় এখন অর্থ বিভাগ ব্যাংকগুলোকে সরাসরি বন্ড দিয়ে দিচ্ছে ।
ব্যাংকঋণের সমপরিমাণ অর্থের বন্ডই ছাড়বে অর্থ বিভাগ । সারের ক্ষেত্রেও একই ভাবে বন্ড পাচ্ছে ব্যাংকগুলো ।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) নভেম্বরের শেষ দিকে নিরবচ্ছিন্ন সার আমদানির ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের সহযোগিতা চায় । ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিমকে এক চিঠিতে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান জানান, সার আমদানির ৩ হাজার ১৬৭ কোটি টাকার ঋণ হয়ে খেলাপি হয়ে গেছে এবং নতুন এলসি খোলায় জটিলতা হচ্ছে ।
গত জুন পর্যন্ত শুধু ইউরিয়া সারের ভর্তুকিই সরকারের কাছে পাওনা ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা । ভর্তুকির টাকা না পেলে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করা যাবে না ।
তারল্য–সংকটে অগ্রণী ব্যাংক এরই মধ্যে এলসি খুলতে অপারগতা প্রকাশ করেছে । আরও বলা হয়, সৌদি আরব থেকে সার আমদানির মূল্য যথাসময়ে পরিশোধ করা হয়নি ।
এ কারণে সৌদি আরবের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অসন্তোষ প্রকাশ করেছে । দেশটির একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে গেছে ।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, ব্যাংকগুলো সরকারের বিশেষ বন্ডকে এসএলআর হিসেবে দেখাতে পারবে । ব্যাংকগুলোকে এসএলআর বাবদ যে অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হয়, এ বন্ডের অংশটুকু আর রাখতে হবে না ।
ফলে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বাড়বে । তবে সোনালী ব্যাংকের মতো ব্যাংক এ সুবিধা নিতে পারবে না ।
কারণ, ব্যাংকটির এসএলআর বাবদ যে অর্থ রাখা দরকার, বর্তমানে তার চেয়ে বেশি টাকার বন্ড কেনা আছে । সোনালী ব্যাংকের এমডি মো. আফজাল করিম প্রথম আলো কে বলেন, ‘বন্ডের সুদের হার নিয়ে আলাপ চলছে ।
আমরা আশা করছি তা বাজার দরেই থাকবে । ’ সরকার বন্ডের পথে গেল কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা বলতে পারব না ।
তবে এটাও একটা বিকল্প, বিশ্বজুড়েই যার চর্চা রয়েছে । ’ বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ) ।
সংগঠনটির সদস্য এখন ৬২ । বিদ্যুতের মূল্য বাবদ সরকারের কাছে তাদের পাওনার বিপরীতে ব্যাংকগুলোর কাছে আবার তাদের দেনা আছে ।
যতটুকু দেনা আছে, তার বিপরীতে ছাড়া হবে বন্ড । বিআইপিপিএর সাধারণ সম্পাদক ইমরান করিম গতকাল প্রথম আলো কে বলেন, ‘আমরা পাওনা পাব না ।
তবে আমাদের দেনা শোধের একটা ব্যবস্থা হচ্ছে । নির্বাচনের আগে প্রজ্ঞাপন হলেও অনেক কাজ বাকি আছে ।
প্রতিটি ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হবে । ’ বর্তমান সরকারের আগের এক আমলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) দায়ের বিপরীতেও ব্যাংকের অনুকূলে বন্ড ছেড়েছিল অর্থ বিভাগ ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলো কে বলেন, যেটা হচ্ছে, তা হলো টাকা না ছাপিয়ে বন্ড ছাড়া হচ্ছে । তা–ও মন্দের ভালো ।
ব্যাংকগুলো আর পাওনা টাকা চাইবে না, বন্ডের বিপরীতে বরং তাদের কিছুটা আয় হবে । তবে এ উদ্যোগে ঠিকই সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ বাড়বে ।
তিনি বলেন, সংকটে না থাকলে সরকার এ পথে যেত না ।