রংপুর-৩ আসনে নির্বাচনে অপ্রতিরোধ্য তৃতীয় লিঙ্গের রানি
দেশের একমাত্র তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানি সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণের দিন থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মাঠে নামেন ।
শুরু থেকেই তার সাবলিল বাচনভঙ্গি আর শুদ্ধ কথা বলায় পাল্টে গিয়েছে রংপুরের নির্বাচনি চিত্র । শুরু থেকেই হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগে পর একে একে সবাইরে মুখে ছড়িয়ে পরে রানির নাম ।
জিএম কাদের কে প্রতীক বরাদ্দের পর তিনি ঢাকায় অবস্থান করায় ভোটারদের সমালোচনার মুখে পড়েন। এরপর জিএম কাদের রংপুরে এসে তার নির্বাচনি এলাকায় দুদিন গণসংযোগ এবং প্রচারনায় অংশ গ্রহণ করেন। তৃতীয় দিন ঢাকায় ফিরে এলে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হন নির্বাচনি এলাকার স্থানীয় জাতীয় পাটির নেতাকর্মীরা । পরে নিজের গণসংযোগ এবং প্রচারনা ঠিক রাখার জন্য ঢাকা থেকে রংপুরে গিয়ে এখন দিন রাত নির্বাচনি প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন ।
তবে থেমে নেই তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানি । কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে তার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন ।
জাতীয় পার্টির এ আসন রানি তার দখলে নেওয়ার জন্য সকল শ্রেণির মানুষের দোয়া চেয়েছেন । রনি যেখানেই যাচ্ছেন লোকজন তাকে দেখতে আর তার কথা শুনতে ভিড় করছেন ।
উন্নয়ন বঞ্চিত সদর আসনের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন । রংপুর-৩ আসনে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও নগরী ও সদর উপজেলা জুড়ে জিএম কাদের ও রানী’র পোস্টারই শোভা পাচ্ছেন ।
গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমেও বেশ আলোচনায় রয়েছেন রানি । রানির এই তৎপরতা দেখে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরকে নিয়ে ভোটারদেও বাড়ি বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছেন ।
নগরীর শালবন এলাকার গৃহবধূ সম্পা হোসেন জানান, আমাদের এলাকায় রানি ছাড়া আর কোনো প্রার্থী ভোট চাইতে আসে নাই । আর জিএম কাদেরকে আমরা চোখে দেখি নাই ।
তিনি জানান, যদি ভোট নতুন কোনো প্রার্থীকে দেবো । এতদিন তো চিহ্নিত একটি মার্কাকে দিয়েছি এবার তা দেবো না স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীকে বেছে নেবো ।
মিস্ত্রী পাড়া এলাকার গৃহবধূ মনি আক্তার জানান, এবার পরিবর্তন চাই । এক মার্কা আর ভালো লাগে না ।
সবাই পরিবর্তন চায় আমিও চাই । এইবার ভোট দেখে শুনে দেবো ।
দর্শনা এলাকার কৃষক রউফ উদ্দিন জানান, এভাবে ভোট হয় না । একটি দল সহজে জিততে চায় ।
এটা কোনো ভোট না । আসন তো ভাগাভাগি হয়ে গেছে ।
নগরীর বাহার কাছনা এলাকার রাজ্জাক জানান, এরশাদ, রওশন এরশাদ, সাদ এরশাদ, জিএম কাদের রংপুর-৩ আসনের এমপি ছিলেন । রংপুর মেডিকেলের দুরবস্থা দেখার কেউ নেই ।
রংপুর নগরীর নূরপুর এলাকার জুলেখা বেগম ও চাঁন মিয়ার সন্তান আনোয়ারা ইসলাম রানি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন । আনোয়ারা ইসলাম রানি জানান, জিএম কাদের দেশের একটি বড় দলের চেয়ারম্যান ।
আমি তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করি । আমি খুব ছোট একজন মানুষ ।
নির্বাচনে আমি ওনাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছি না, আমি নিজেকে একজন অংশগ্রহণকারী মনে করছি । রংপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করায় নির্বাচনে বড় দলের প্রার্থী হিসেবে জিএম কাদেরই রয়ে গেছেন ।
আমরা সারাজীবন জাতীয় পার্টিকে ভোট দিয়ে এসেছি । কিন্তু তারা কোনো উন্নয়ন করে দেখাতে পারেনি ।
সারা দেশের তুলনায় রংপুরকে তারা অনেক পিছিয়ে রেখেছে । তাই মানুষ বিকল্প হিসেবে আমাকে ভোট নিয়ে নির্বাচিত করে এলাকার উন্নয়ন করতে চাচ্ছেন ।
রানি বলেন, জাতীয় পার্টির এমপিরা ঘুঘুর মতো ধান খেয়ে গেছে, কোনো উন্নয়ন করেনি । আমার স্বামী নাই, সন্তান, নাই, সংসার নাই, সম্পদের প্রয়োজন নাই, পরিবারের জন্য কানাডাতে বাড়ির প্রয়োজন নাই, আমার লোভ-লালসা নাই ।
আমি মানুষের সেবা করতে চাই, সেবা করতে পছন্দ করি । তাই সাধারণ মানুষ আমাকে চাচ্ছে ।
রানি অভিযোগ করে বলেন, একটি মহল পরাজয়ের ভয়ে রাতের আঁধারে তার পোস্টার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলছে । তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন যদি ৭ জানুয়ারি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় তাহলে তিনি জয়ী হবেন ।