ভারত ভ্রমণঃ পর্ব ০১
ভারত ভ্রমণঃ পর্ব ০১
ভারত ভ্রমণ নিয়ে আজ প্রথমপর্ব। যেখানে থাকবে সিম, টাকা পরিবর্তন, ট্রেন ও বাস টিকিট নিয়ে নানান তথ্য।
আশাকরি ভ্রমণ প্রিয় মানুষ কিংবা যারা প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে ভারত ভ্রমণ করতে চান (অবশ্যই আমার মত প্রথমবারের পাবলিক যারা তারা, পুরাতন ব্যক্তিদের জন্য এ লেখা নহে তাদের কাজে আসবে।
#সিম_ও_রূপী_পরিবর্তনঃ-
বর্ডার পার হতেই সবার আগে যে কাজ দু'টি করা উচিত তা হলো.
১, ভারতীয় মোবাইল সিম কেনা
২, টাকাকে রূপী পরিবর্তন করে নেয়া।
সিম কেনার জন্য অসংখ্য ছোট দোকান আপনি, পাবেন। সেখানে এয়ারটেলের সিম নিতে পারেন ৩০০ রূপি খরচ হবে। মেয়াদ ১ মাস। প্রতিদিন ১ জিবি করে ডাটা ও সমগ্র ভারত ফ্রি কথা বলতে পারবেন৷ আর টাকাকে রূপী বানানোর জন্য বর্ডার এরিয়া বেস্ট। এখানে ৭০ টাকা বা তার কাছাকাছি রেট পেলেও কলকাতা শহরে ঢুকলে ৬৮/৬৭ রেট পাবেন। উল্লেখ্য মুদ্রা পরিবর্তনের জন্য কলকাতা শহরের ভিতরে নিউমার্কেট/মারকুইজ স্ট্রিটে অনেক দোকান পাবেন।
#ট্রেন_ও_বাস_টিকিটঃ-
সমগ্র ভারতে ট্রেন ব্যবস্হা সবচেয়ে জনপ্রিয়। যার কারণে টিকিট নিয়ে ক্রাইসিস থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ট্রেন ভাড়াও খুব কম। এই যেমন, যারা বেনাপোল বর্ডার দিয়ে বনগাঁও স্টেশন আসবেন, তারা মাত্র ২০ রূপীতে শিয়ালদহ আসতে পারবেন। ঠিক একইভাবে যারা দর্শনা বর্ডার দিয়ে ঢুকবেন তারা গেঁদে স্টেশন থেকে ৩০ রূপীতে শিয়ালদহ আসতে পারবেন। মূলত এগুলো লোকাল বা কমিউটার টাইপের ট্রেন। তবে, সিট ভাল, ট্রেনের পরিবেশও ভাল। অজস্র মানুষ প্রতিনিয়ত এ ট্রেনে করে শহর, গ্রাম পার হয়ে অফিস করে আবার বাড়িও ফিরছে। ট্রেনগুলোর গন্তব্য শিয়ালদহ। সেখানে নেমে যে কোন বাস, টেক্সি ধরে আপনি আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।
দূরের যাত্রার জন্য যে সমস্ত ট্রেন থাকে তাতে এসি ও নন এসি স্লিপার থাকে। এসিতে আবার থ্রি টায়ার, টু টায়ার থাকে। থ্রি টায়ার বলতে কেবিনে লোয়ার, মিডল ও আপার স্লিপার অর্থাৎ ৩+৩ মোট ০৬ জনের শোয়ার ব্যবস্হাকে থ্রি টায়ার বলে এবং ২+২ মোট ০৪ জনের শোয়ার ব্যবস্হাকে টু টায়ার বলে। আর নন এসি সব থ্রি টায়ারই হয়।
টু টায়ার খুবই ব্যয়বহুল হয়৷ এসিতে যাওয়ার জন্য থ্রি টায়ারই এনাফ। তবে সবচেয়ে ভাল সিট হলো টু টায়ারের সাইড আপার কিংবা সাইড লোয়ার। এখানে আপনি থ্রি টায়ারের টাকায় টু টায়ারের সিট পাবেন। বিষয়টি বেশ চমৎকার। আর নন এসি যেহেতু সবই থ্রি টায়ার তো সেখানে সাইড আপার কিংবা সাইড লোয়ার পেলেও অমন টু টায়ারের ফিল পাবেন। তবে মনে রাখবেন, নন এসি টিকিট করলে অবশ্যই আপার টিকিট নিবেন। তাহলে ঘুমানোর কষ্ট হবে না। কিন্তু মিডল আর লোয়ার নিলে কেল্লা ফতে!! সারাক্ষণ নিজের সিট অন্যের দখলে দেখতে হবে।।
কিছু ট্রেন আছে রাজকীয়। যেমন, দূরন্ত, রাজধানী এক্সপ্রেস প্রভৃতি। এসব ট্রেনে খাবার দেয়া হয় যার মূল্য টিকিটের সাথে এ্যাড থাকে। আর বাকি ট্রেনগুলোতে ইন্ডিয়ার রেলওয়ের ক্যাটারিং সার্ভিসের খাবার কিনে খাওয়া যায়। তবে চেষ্টা করবেন তা না কিনে কোন স্টেশনে ট্রেন থামলো নিচে নেমে প্যাকেট খাবার কিনতে। তাহলে ট্রেনের চেয়ে অর্ধেক মূল্যে সে খাবার কিনতে পারবেন।
একটা এ্যাপস নামিয়ে নিবেন ইন্ডিয়াতে ঢুকেই। Where is my train এ এ্যাপসটি খুবই কার্যকরী। প্রতিটি ট্রেনের যাবতীয় তথ্য আপনি এখানে পাবেন। যা আমাকে অভূতপূর্ব সহযোগিতা করেছিলো।
বাসের টিকিটের জন্য বিভিন্ন এ্যাপস /ওয়েবসাইট আছে। সেখান থেকে টিকিট কাটতে না পারলেও সব তথ্য পাবেন। আর টিকিট কাটার জন্য এজেন্টের কাছে যেতে হবে। অধিকাংশ লং জার্নির বাস স্লিপার। চেষ্টা করবেন একটু ভাল মানের স্লিপারে চড়ার। ওখানে ছাগল তোলে এমন স্লিপারও পাবেন। একপাশে আপনি শুয়ে আছেন অন্যপাশে ছাগলের পাল তুলেছে... যেহেতু পরিবহন সম্পর্কে ধারণা থাকবে না কেননা টিকিট কাটবেন এজেন্টের থেকে তাই বিষয়টি নিয়ে আগেই ভাববেন।
মেট্রোরেল খুবই চমৎকার। আমি কলকাতায় ও দিল্লী সবটুকু ঘুরাঘুরি মেট্রোরেলে করেছিলাম। প্রতি ২/৩ মিনিট পরপরই ট্রেন। স্টেশনে ঢুকলে তাজ্জব হয়ে যাবেন এটা ভেবে যে, মাটির তলে এ কী রাজ্য!! খুব সীমিত ভাড়ায় কলকাতা মেট্রোরেল ঘুরা গেলেও দিল্লীর মেট্রোরেল ভাড়া তুলনামূলক বেশি মনে হয়েছে আমার কাছে।
এবার তথ্য দি কিভাবে আপনি দূরের যাত্রার ফরেন কোটায় টিকিট কাটবেন। খুব সকালেই হাজির হবেন হাওড়ার একটু আগে ফেয়ারলি প্লেস নামক রেল ভবনে। সেখানে দু'টা কাউন্টার। একটা ঢাকায় আসার ট্রেনের জন্য আর একটা সমগ্র ভারতের রেল টিকিট। পাসপোর্ট সাথে নিবেন। সেখানে সিরিয়ালে আপনার পালা আসলে কাউন্টারে আপনার জার্নি ডেট ও এরিয়া জানালে তারা টিকিট দিবে। দিনের টিকিট দিনেও পাওয়া যায়। আমি কলকাতা-দিল্লী (কালকা মেইলের) টিকিট পেয়েছিলাম জার্নির দিন সকালেই। তবে অবশ্যই অনেকগুলো বিকল্প ডেট/অপশন নিয়ে সে কাউন্টারে হাজির হবেন যেন একটা না পেলে অন্যটা চুজ করতে পারেন। আর হ্যাঁ, সেখান থেকে টিকিট কাটলে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিতে হয়। এটা অফিসিয়াললি.... যেমন কলকাতা - দিল্লী নন এসি স্লিপার ৫৯০ রূপী হলেও নিয়েছিলো ৯২৫ রূপী। আর ফেরার ডেট পূর্ব নির্ধারিত হলে যাওয়ার টিকিটের সাথে ফেরারটাও ঐ কাউন্টার থেকে করতে পারবেন। এছাড়াও দিল্লী রেল ভবন থেকেও এই বিশেষ কোটার টিকিট কাটা যায় বলে জেনেছি।